ঢাকা ০৩:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বসন্ত ও ভালোবাসার উত্তাপ,ফুল বিক্রি ৩০০ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫৮:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
  • ৮৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফেব্রুয়ারি মানেই বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অন্য সব মাসের তুলনায় এ মাসে বাংলাদেশে ফুলের চাহিদা থাকে অনেক বেশি। তাইতো দিবসগুলোকে সামনে রেখে দিন-রাত ফুল বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন ফুল চাষিরা।

তারা জানান, বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস এবং আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। এই দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে ফুলচাষিরা, বিশেষ করে যশোরের গদখালি ফুল চাষিরা কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন।

বাংলাদেশ ফুল চাষি সমিতির সভাপতি আ. রহিম জানান, দেশের গোলাপ ফুলের চাহিদার সিংহভাগ আসে যশোরের গদখালী থেকে। শুধু গোলাপই নয়, এই এলাকা জুড়ে অনেক ধরনের ফুল চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এই তিন দিবসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দিন রাত ফুল ও ফুলগাছের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন চাষিরা।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকেই গদখালি ফুল চাষিরা বাজারে ফুল সরবরাহ শুরু করেছেন। বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জন্য এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

ফুল চাষি আনোয়ারুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন ঝিকর গাছার গদখালী বাজারে।

দেশের সর্ব বৃহৎ পাইকারী ফুলের বাজার এই গদখালি। এই কারণে গদখালিকে দেশের ফুলের রাজ্য বা রাজধানী বলা হয়ে থাকে। যশোর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা উপজেলার ৭৫টি গ্রামের সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল।

গদখালির গ্রামগুলোর রাস্তার দুইপাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকতে হয়।

যশোর-বেনাপোল রোড ছেড়ে ডানে, বায়ের গ্রামগুলোয় ঢুকে কিছুদূর এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে দিগন্ত জোড়া ফুলের মাঠ। রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, গোলাপ আর গাঁদা ফুল চাষ হয় এসব গ্রামে।

প্রতিবছর ৫০০ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয় এসব মাঠ থেকে। শত শত বিঘা জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, ডেইজি জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ।

পানিসারা গ্রামের ফুল চাষি রহমান মিষ্ণা জানান, এবছরে ফুলের রাজ্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে টিউলিপ ফুল। শীত প্রধান দেশের ফুল টিউলিপ এদেশে ফুটবে ভাবেনি কেউ! টিউলিপ ফুল বাংলাদেশে প্রথমে ঢাকার গাজীপুরে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করা হয়, এরপরে দ্বিতীয় বারের মত যশোরের গদখালীতে গত বছর চাষ হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এ বছরও চাষ করা হয়েছে টিউলিপ।

ব্যবসায়ীরা এই ফুল কিনে দেশের সর্ববৃহৎ ফুল মার্কেট ঢাকার শাহবাগে সরবরাহ করেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীসহ সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুল সরবরাহ করে আসছেন পাইকাররা।

গদখালির বিরলিয়া গ্রামের ফুল চাষি মকবুল জানান, ১৯৯০ সালে ঢাকার কয়েকজন যুবক অন্যের জমি লিজ নিয়ে এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো আর ওই যুবকদের সফলতা দেখে স্থানীয়রাও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ শুরু করেন। খুব কম সময়ের মধ্যে গ্রামটিতে গোলাপের চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

এবছরও গদখালি এলাকার প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে গোলাপসহ নানা রকম ফুল চাষ করেছেন স্থানীয় চাষিরা। এ গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন এই ফুল চাষ করে।

ফুলচাষিরা বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে যে ফুল বেচা-কেনা হয় তার অনেকটাই পূরণ করে বিরলিয়ার উৎপাদিত ফুল। আসছে বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বসন্ত ও ভালোবাসার উত্তাপ,ফুল বিক্রি ৩০০ কোটি টাকা ছাড়াতে পারে

আপডেট টাইম : ১১:৫৮:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারী ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফেব্রুয়ারি মানেই বসন্ত উৎসব, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। অন্য সব মাসের তুলনায় এ মাসে বাংলাদেশে ফুলের চাহিদা থাকে অনেক বেশি। তাইতো দিবসগুলোকে সামনে রেখে দিন-রাত ফুল বাগানের পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন ফুল চাষিরা।

তারা জানান, বসন্ত বরণ ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস এবং আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। এই দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে ফুলচাষিরা, বিশেষ করে যশোরের গদখালি ফুল চাষিরা কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নিয়েছেন।

বাংলাদেশ ফুল চাষি সমিতির সভাপতি আ. রহিম জানান, দেশের গোলাপ ফুলের চাহিদার সিংহভাগ আসে যশোরের গদখালী থেকে। শুধু গোলাপই নয়, এই এলাকা জুড়ে অনেক ধরনের ফুল চাষ হয়। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এই তিন দিবসে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে দিন রাত ফুল ও ফুলগাছের পরিচর্যা করে যাচ্ছেন চাষিরা।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকেই গদখালি ফুল চাষিরা বাজারে ফুল সরবরাহ শুরু করেছেন। বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের জন্য এখন প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

ফুল চাষি আনোয়ারুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন সূর্য অস্ত যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা ফুল কিনতে ভিড় জমাচ্ছেন ঝিকর গাছার গদখালী বাজারে।

দেশের সর্ব বৃহৎ পাইকারী ফুলের বাজার এই গদখালি। এই কারণে গদখালিকে দেশের ফুলের রাজ্য বা রাজধানী বলা হয়ে থাকে। যশোর শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে ঝিকরগাছা উপজেলার ৭৫টি গ্রামের সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয় হরেক রকমের ফুল।

গদখালির গ্রামগুলোর রাস্তার দুইপাশে দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে লাল, নীল, হলুদ, বেগুনি আর সাদা রঙের ফুলের সমাহার দেখে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকতে হয়।

যশোর-বেনাপোল রোড ছেড়ে ডানে, বায়ের গ্রামগুলোয় ঢুকে কিছুদূর এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে দিগন্ত জোড়া ফুলের মাঠ। রজনীগন্ধা, গ্লাডিওলাস, গোলাপ আর গাঁদা ফুল চাষ হয় এসব গ্রামে।

প্রতিবছর ৫০০ কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয় এসব মাঠ থেকে। শত শত বিঘা জমি নিয়ে গাঁদা, গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, ডেইজি জিপসি, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকাসহ আরও বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের চাষ।

পানিসারা গ্রামের ফুল চাষি রহমান মিষ্ণা জানান, এবছরে ফুলের রাজ্যে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে টিউলিপ ফুল। শীত প্রধান দেশের ফুল টিউলিপ এদেশে ফুটবে ভাবেনি কেউ! টিউলিপ ফুল বাংলাদেশে প্রথমে ঢাকার গাজীপুরে পরীক্ষামূলক ভাবে চাষ করা হয়, এরপরে দ্বিতীয় বারের মত যশোরের গদখালীতে গত বছর চাষ হয়েছিল, তারই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে এ বছরও চাষ করা হয়েছে টিউলিপ।

ব্যবসায়ীরা এই ফুল কিনে দেশের সর্ববৃহৎ ফুল মার্কেট ঢাকার শাহবাগে সরবরাহ করেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহীসহ সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুল সরবরাহ করে আসছেন পাইকাররা।

গদখালির বিরলিয়া গ্রামের ফুল চাষি মকবুল জানান, ১৯৯০ সালে ঢাকার কয়েকজন যুবক অন্যের জমি লিজ নিয়ে এই এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে প্রথম গোলাপ চাষ শুরু করেন। ফলন ভালো আর ওই যুবকদের সফলতা দেখে স্থানীয়রাও ধীরে ধীরে বাণিজ্যিকভাবে গোলাপ চাষ শুরু করেন। খুব কম সময়ের মধ্যে গ্রামটিতে গোলাপের চাষ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

এবছরও গদখালি এলাকার প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে গোলাপসহ নানা রকম ফুল চাষ করেছেন স্থানীয় চাষিরা। এ গ্রামের ৯০ শতাংশ মানুষ জীবিকা নির্বাহ করেন এই ফুল চাষ করে।

ফুলচাষিরা বলেন, সারাদেশে বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে যে ফুল বেচা-কেনা হয় তার অনেকটাই পূরণ করে বিরলিয়ার উৎপাদিত ফুল। আসছে বসন্ত বরণ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবস, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে এ অঞ্চলের ফুলচাষিরা কমপক্ষে ৩০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন।